মায়ের সঙ্গে ট্রেনে করে সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ নিজ বাড়িতে ফিরছিল এক কিশোরী। সিলেট থেকে ভানুগাছ স্টেশন পর্যন্ত স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটে তারা। ট্রেনের বগিতে ভিড় থাকায় ভুল করে কুলাউড়া জংশন স্টেশনে নেমে পড়ে ওই কিশোরী। কিন্তু স্টেশনে মাকে না পেয়ে তার সন্দেহ হয় কিছু ভাবার আগেই স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে দেয়। এরপরই বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে ওই কিশোরীকে শিকার হতে হয় ধর্ষণের।
ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পর বাড়ি ফিরতে পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল সেই কিশোরী। তখন আক্তার আলী নামের এক গাড়িচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন ওই কিশোরী। এমনকি কিশোরীকে জিম্মি করে তার স্বজনের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন চালক।
এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কুলাউড়া রেলওয়ে থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পরে আক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আক্তারের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কায়স্থ গ্রামে। তিনি পেশায় প্রাইভেট কারের চালক। কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সিলেটে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করতেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার ও কিশোরীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরীর পরিবার হতদরিদ্র। সিলেটের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক স্বজনকে দেখে গত ৩০ জুন মায়ের সঙ্গে সে বাড়িতে ফিরছিল। ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে মাকে হারিয়ে ফেলে। ভুলে কুলাউড়া রেলস্টেশনে নামার পর গাড়িচালক আক্তার আলী তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলেন। এতে কিশোরী রাজি হয়ে গাড়িতে ওঠেন। আক্তার তাকে সিলেটের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখান এবং একপর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন।
এজাহারে বলা হয়, নিখোঁজের সময় কিশোরীর কাছে একটি মুঠোফোন ছিল। সিলেটে যাওয়ার পর আক্তার তার মুঠোফোনটি কেড়ে নেন। ওই মুঠোফোনে থাকা কিশোরীর এক আত্মীয়ের সঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে কথা বলেন। তখন তিনি নিজেকে সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে জানান, কিশোরী তার হেফাজতে আছে। তাকে ফেরত পেতে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় গতকাল সোমবার রাতে নগরের কদমতলী এলাকা থেকে কিশোরীকে উদ্ধারের পাশাপাশি আক্তার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপক দেওয়ান মঙ্গলবার বিকেলে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আক্তার আলী অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিশোরীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবারকে ন্যায়বিচারসহ সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ
